
পরিচয়ে আমি মানুষ-
কিন্তু আমি তো জানি-
বাবার বাধ্য মেয়ে আমি।
যার শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে,
কিন্তু নেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
পরিচয়ে আমি মানুষ বটে।
যে অর্ধাঙ্গী, জননী, বোন, প্রেয়সী
ভালোবাসার জলে জলে ভরা আমার নদী
শুধু নেই ঢেউ,
যে ঢেউয়ে ভেসে পাড়ি দিতে পারি পরাধীনতার সমাধি।
পরিচয়ে তাই আমি মানুষ নই-
আমি নারী।
আমার বেঁচে থাকার সীমা আছে,
ভাসতে থাকার নিদৃষ্ট ঢেউ আছে,
হাসার উচ্চতা পরিমাপ করা আছে,
কাঁদার জন্য বালিশ আছে।
তাই আমি সব হিসেব পেরিয়ে
তেল, নুন, লাকড়ি নিয়ে বসি।
আমি নারী, আমি বহুরূপিনী,
বেগম রোকেয়ার অবরোধবাসিনী।
রবি ঠাকুরের সাধারণ মেয়ে অথবা কৃষ্ণকলি।
জীবনানন্দের দু-দন্ড শান্তিদায়ী বনলতা সেন
বঙ্কিমের প্রাসাদ বন্দিনী তিলোত্তমা বা
পতি বিরহে আত্মঘাতিনী কুন্দ নন্দিনী।
বনফুলের নিমগাছের মতো শত দুঃখেও
মুখবুজে থাকা বঁধু বা
যতীন্দ্রের প্রবাসী স্বামীর পথ চেয়ে থাকা একাকী অন্ধবঁধু।
পুরুষ, তোমাকে ধারন করেছি বলেই
আজ আমি নারী!
আমার শরীর স্থুল, মন কাঁদামাটি।
তাই তুমি পুতুল বানাও,
তুমিই সূতা নাড়াও,
আমি নাচতে থাকি…
বাসে, ট্রেনে, ট্রামে যাকে
নিরবে সবকিছু সহ্য করতে হয়
সেই নারীই আমি।
এই সমাজ যতটুকু বাঁচার অধিকার দিয়েছে
তার থেকে হাজারগুণ করেছে অবহেলা-অবমাননা,
কারন, আমি নারী।
হ্যা, সবশেষে আমি মা।
আমাকে বুঝতে হবে, গড়তে হবে,
কান্না পেলে হাসতে হবে-
ভাঙতে গেলে ক্ষতবিক্ষত হতে হবে।
কষ্ট পেলে খুব নিরবে কাঁদতে হবে।
কিন্তু ক্যানো আমাকেই সব দুঃখ নিতে হবে?
আমি তো শুধু মাতা নই!
আমি এই বন্দী জীবন চাইনা।
আমার মমতায় ভর করে-
আমিই হবো বিশ্ব বিধাত্রি।
বেঁচে রবো মানুষ রূপে, উন্নত মম শিরে,
মসৃণ পথে।
হে মানুষ, তোমরা যদি মন থেকে পূজা করো-
আমার পায়ে পবিত্র অর্ঘ্য বর নিয়ে থাকো,
তাহলে এ ধৃষ্টতা দেখিও না,
বন্ধ করো এ অন্যায়।
আচ্ছা, নারী বলেই কি তনুরা ধর্ষিতা?
আজ হাজারো খাদিজার জখম প্রশ্নবিদ্ধ করছে মানবতা।
হাজারো নারী রাস্তায় নামছে স্বাধীনতার খোঁজে।
পত্রিকার পাতায় বিভৎস দেহ দেখে আমরা স্তব্ধ।
হাজারো তদন্ত রিপোর্ট তালাবদ্ধ বাক্সে,
তারপরও মন্ত্রী সাহেবেরা মিডিয়াকে ব্রিফিং দিচ্ছে-
ধর্ষিতা পূজার পরিবারকে দুই লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে,
মেডিক্যাল রিপোর্ট হচ্ছে-
এক সপ্তাহে অপরাধী আটক হবে।
কিন্তু সেই সপ্তাহ আর আসেনা।
তদন্ত বাক্সের তালাও খুলে না।
এভাবে প্রহসনের স্বীকার-
বিচার, স্বাধীনতা আর মানবতা।
এই যুগে এসে আমরা কি পুরুষের প্রতিযোগী নই?
আমি আজ নিশাত মজুমদার, নভেরা আহমেদ,
জান্নাতুল, সালমা বা রাষ্ট্রপ্রধান।
তবুও কি তোমরা ভ্রান্তির সাগরে সাঁতার কাঁটা থামাবে না?
যদি শুধুমাত্র রাক্ষসী নৃমুন্ডমালিনী-
তোমাদের একমাত্র পূজনিয় হয়,
তবে শুনে রেখো সমাজ-
নারী একদিন তোমাদের ভীতির কারন হবে।
সমাজ তুমি জেনে রাখো-
আমি স্বপ্ন দেখি-
সাম্যের মশাল হাতে সত্যি মানুষ হবো।
দুর্গতিনাশিনীবেশে ধ্বংস করবো-
সব পুরুষ পতিতাদের।
যারা নারীকে দ্যাখে দাসী পতিতা আর পুতুলরূপে।
তোমরা যদি মনে করো-
প্রজননযন্ত্র বলে আমি জননী,
রমণযোগ্য বলে আমি রমণী,
মহলে থাকি বলে মহিলা,
গৃহে আসবাবের মতো বলে গৃহিণী,
তবে ভুল ভাবছো-
আমি একবিংশ শতাব্দীর নারী।
—
Artwork: To the bone, mixed media, 11”x15” by u/Socialist-Butterfly