আমি আমার লাশটা কাঁধে নিয়ে হাঁটছি।
এখানে কেউ আমাকে চেনেনা।
একজন বাজারের ব্যাগ হাতে এসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দুঃখ করতে করতে চলে গেলো।
আরেকজন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো ‘পুলিশে খবর দিন কেউ!’
একজন উৎসাহী সুরে বললো ‘বুকে কান পেতে দেখেন তো প্রাণ আছে কিনা।’
এই বলতেই আরেকজন বললো ‘আরে এম্বুলেন্স খবর দিন কেউ, হাসপাতালে নিতে হবে’
গুলিটা এসে বামদিকে লেগেছিলো, কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি মানুষগুলো সব ছুটতে শুরু করেছে।
আমি শুধু লুটিয়ে পড়ছি মাটিতে,
একটা গাছ, নিথর দাঁড়িয়ে দেখছে আমাকে।
গুলির শব্দ বাতাসে তুলে দিয়েছে ভিন্ন আন্দোলন।
আমি সেই আন্দোলনের মধ্যিখান থেকে আমার দেহটাকে তুলে ধরে ছুটছি।
চারদিকে হৈ চৈ,পুলিশের পোশাক পরে দৌড়াচ্ছে একদল।
মিছিল ভেঙে যাচ্ছে, এলোপাথাড়ি পড়ে আছে লাঠি, ফেস্টুন, ব্যানার।
হরতাল হরতাল বলে কোথাও কেউ চিৎকার করছে না।
শুধু একটা ছেলে দৌড়ে এসে বলেছে ‘কেউ লাশটা তুলে ধরুন, গাড়িতে নিতে হবে!’
গুলিটা কোথা থেকে এসেছে কেউ দেখেনি।
আমি দেখেছি,ছেলেটা, মুখে কালো কাপড় বাঁধা।
ছেলেটা আমাকে চেনেনা, যেমন আমি চিনিনা তাকে।
সাদা তুলার মত টিয়ারগ্যাস ভাসছে আমার চোখের সামনে।
আমি সাদা সাদা তুলার আড়ালে পড়ে আছি।
আর আমি দেখছি আমার শহরটাকে, যাকে আমি ফেলে রেখে এসেছি তিনশো মাইল দূরে, একা আমার মত।
আমি দেখছি নামাজে বসে আমার মা হাত তুলে কী যেন বিড়বিড় করছেন।
দেখছি ছোটবোন চুলে বেনুনি, টেবিলে বসে আঁকিবুঁকি করছে খাতায়।
গাছটা নিথর তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
এখানে কেউ আমার নাম জানেনা।
আমি আমার বেনামী শরীর কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছি।
একজন চিৎকার দিয়ে বলছে ‘প্রাণ আছে, প্রাণ আছে!’
হুইসেল বাজিয়ে পুলিশ আসছে কালো জিপে করে।
আমি দৌড়াচ্ছি আমাকে কাঁধে নিয়ে।
ওরা আমাকে মৃত ঘোষণা করে দেওয়ার আগেই আমি কোথাও পৌঁছুতে চাই, আমার একলা শহরটা, আমি সেখানে যেতে চাই একবার।
আর মায়ের নামাজ শেষ হওয়ার আগেই,
আমি গিয়ে দাঁড়াতে চাই আমার উঠোনে।
একবার দেখেছিলাম মর্গ, বিভৎস দেখাচ্ছিলো মানুষগুলোকে।
আমি এম্বুলেন্সের সাইরেন পেছনে ফেলে দৌড়াচ্ছি।
চারদিকে এত এত রাস্তা, তবুও আমি পেরুতে পারছি না।
কারা যেন আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
শুনছেন? মর্গ আমার ভালো লাগে না।
বেওয়ারিশ
(Visited 64 times, 1 visits today)