প্রিয়তমা, কোথায় আছ?
তুমি কি সেই ক্ষুদ্র স্বর্গের কোন ফুলের তৃষ্ণা নিবারণে ব্যস্ত,
যে তোমার দিকে তেমনই তাকিয়ে যেমন শিশুরা চেয়ে থাকে মায়েদের বুকে?
অথবা, ব্যক্তিগত কামরায় যেখানে আত্মসম্মানে পুণ্যের মন্দির অপেক্ষিত,
যার বেদীতে উৎসর্গ করে দিয়েছো আমার আত্মা ও হৃদয়?
অথবা, এমন কোন বইয়ের ভাঁজে যা খুঁজে ফেরে মানবীয় জ্ঞান,
যখন তুমিই পূর্ণ স্বর্গীয় জ্ঞানে?
আত্মসঙ্গি, তুমি কোথায় লুকানো?
নাকি মন্দিরে প্রার্থনারত?
অথবা প্রকৃতিকে ডেকে চলেছ খোলা আকাশের নিচে?
কিংবা, স্বর্গকে তোমার স্বপ্নে?
তুমি কি তোমার আত্মার বিশুদ্ধতা নিয়ে
কোন ভগ্ন হৃদয় দারিদ্রের কুঁড়েঘরে,
আর তাদের দুহাত ভরে বিলিয়ে দিচ্ছ সমস্ত ঐশ্বর্য?
তুমি ঈশ্বরাত্মা।
সময়ের চেয়েও আগ্রাসী;
মনে আছে প্রথম দেখা,
যখন আমাদের ঘিরে রেখেছিল তোমার আত্মার অলৌকিকতা
আর ভেসে ছিল ভালোবাসার পরীরা,
সুরে সুরে গেয়েছিল হৃদয়গাঁথা?
মনে কি পড়ে গাছের ছায়ায় বসে থাকা,
স্বাভাবিক স্বভাব থেকে নিজেদের আগলে রাখা,
যেভাবে আঘাতের ভয়ে পাঁজর রক্ষা করে হৃদয়ের অলৌকিক গোপনীয়তা?
মনে আছে সেই সব গ্রাম্য পথ ও বনানি,
হাতে হাত রেখে,পরস্পরে মাথা এলিয়ে যা এমনভাবে হেঁটেছি,
যেন আমরা আমাদেরকে আমাদের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছি?
তোমার বিদায় বেলার সেই বেলাবাসী চুম্বন মনে পড়ে কেন?
যা আমাকে শিখিয়েছে ঠোঁটের অনাবৃততায় স্বর্গীয় গোপন ভালোবাসা,
যা উচ্চারণে ব্যর্থ জিহ্বার মাধুর্যতা!
যে চুমুতে ছিল এক গভীর দীর্ঘশ্বাসের ভূমিকা,
যেমন ঈশ্বরের সমীরণে আছে পৃথিবীকে মানুষে রূপান্তরের ইতিকথা।
যে দীর্ঘশ্বাস আমাকে পৌঁছে দিয়েছে অপার্থিব পৃথিবীতে,
আবৃতি করেছে ব্যক্তি আত্মার মহিমা,
যা অপেক্ষারত আমাদের পুনর্মিলন পর্যন্ত।
আমার মনে পড়ে তোমার উদ্ভ্রান্ত চুমুর কথা,
চোখের জলে ভেসে যাওয়া কপল এবং তুমি বলেছিলে-
“পৃথিবীর শরীর পৃথিবীর প্রয়োজনেই আলাদা হয়ে যায়,
তবে অবশ্যই আলাদা বেঁচে থাকে পৃথিবীরই চাহিদায়।
আত্মা একই সাথে থাকে ভালোবাসার হাতে,
যতক্ষণ না মৃত্যু এসে দ্বৈত হৃদয় ঈশ্বরাবধী নিয়ে না যায়।
তুমি যাও প্রিয়তম; ভালোবাসার প্রতিনিধিত্ব কর,
যে তার অনুসারীকে বিলিয়ে দেয় পেয়ালা পূর্ণ জীবন অমৃত।
আমার শূন্য বাহুতে তোমার ভালোবাসা এখনও শান্তির বর;
তোমার স্মৃতি আমার অনন্তের সাথী”।
এখন কোথায় তুমি অন্য আমি?
জেগে আছ কি রাত্রির নিরবতায়?
অনিল বাতাসে ভাসিয়ে দিলাম-
প্রতিটি হৃদস্পন্দন আর আনুরক্তি।
তুমি কি এখনও স্মৃতি হাতড়ে আমার মুখাবয়ব খুঁজে ফেরো?
সে প্রতিমা এখন আর আমার নেই,
অতীতের সুচেতা চেহারায় দুঃখ এঁকে দিয়েছে তার ব্যক্তিগত প্রতিবিম্ব।
শ্বাস অযোগ্য কান্না শুকিয়ে নিয়েছে তুমি বিম্বিত চোখ,
আর শুকিয়ে দিয়েছে তোমার চুমু আবিষ্ট সুমিষ্ট ঠোঁট।
প্রিয়তমা, কোথায় আছ?
সমুদ্রের ওপাশ থেকে কান্না শুনতে পাও?
তুমি কি বোঝ আমার অপ্রতুলতা?
তুমি কি জানো আমার ধৈর্যের অপেক্ষা?
বাতাসে এমন কোন তেজ আছে কি
যা তুমি বধি পৌঁছে দেবে এ মৃতপ্রায় নবপ্রাণের সমীরণ সম?
তোমার আর পরীদের কোন গোপন আসরে পৌঁছে দেবো কি অনুযোগ যত?
তুমি কোথায় সুন্দরী তাঁরা?
জীবনের দুর্বোধ্যতা আমাকে জীবনের বুকেই ছুড়ে ফেলেছে;
দুঃখ করেছে আমাকে অধিগ্রহণ।
বাতাসে হাসির পাল তুলে দাও;
এটাই আমাকে প্রাণবন্ত করে নিয়ে যাবে!
বাতাসে সুরভী ছরাও;
তাতেই আমার পূর্ণতা অর্থবহ হবে!
তুমি কোথায়, প্রিয়তমা?
ভালোবাসা কত বৃহৎ!
আর আমি কত ক্ষুদ্র!
সুন্দর ও প্রাণবন্ত একটি কবিতা।
ধন্যবাদ কবিকে।